পুদিনা পাতার ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা এবং অপকারিতা সর্ম্পকে বিন্তারিত জানুন

আপনারা অনেকেই পুদিনা পাতার  ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা সর্ম্পকে ভালোভাবে জানেন না। পুদিনা পাতা একটি ভেষজ উদ্ভিদ ও এর ভেষজ ঔষধের গুনাগুন অনেক। পুদিনা পাতাকে প্রাকৃতিক ভেষজ মহা ঔষধ বলা হয়। আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের পুদিনা পাতার ঔষধি গুনাগুন ও তার ব্যবহার সমদ্ধে সুস্পষ্ট ভাবে জানাবো।

যেহেতু পুদিনা পাতার  ঔষধি গুনাগুন, ব্যবহার ও উপকারিতা সমদ্ধে আমরা অনেকেই জানিনা। পুদিনা  পাতার ঔষধি গুনাগুন সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আমাদের সবার প্রাকৃতিক উপাদানের ঔষধি গুনাগুন, ব্যবহার ও উপকারিতা সমদ্ধে জ্ঞান রাখা জরুরী। 

পোস্ট সুচিপত্রঃ পুদিনা পাতার  ঔষধি গুনাগুন, ব্যবহার ও উপকারিতা 

পুদিনা পাতার বৈজ্ঞানিক নাম

বৈজ্ঞানিক নাম মেনথা স্পিক্যাটা (Mentha Spicata)। এটি  লামিক্যাটা (Lamiaceae) জাতের অন্তর্গত। প্রায় সব দেশেই পুদিনার গাছ  চাষাবাদ ও উৎপাদন করা হয়। পুদিনার পাতা সুগন্ধি হিসাবে জুস, শালাত ও রান্নায় কাজেও ব্যবহার করা হয়। 

পুদিনা পাতার ঔষধি গুনাগুন

পুদিনা পাতা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারি ঔষধি উদ্ধিদ তাই প্রাচীনকাল থেকেই ঔষধ হিসাবে বহুল পরিচিত। মোটামুটি আমরা অনেক মানুষই জানি পুদিনা একটি উপকারি ঔষধি উদ্ভিদ। পুদিনা পাতা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও নান রোগ হতে মানবদেহকে প্রতিরোধে করে। পুদিনা পাতায় রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি আর ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স। পুদিনা পাতা ত্বকের যেত্নে আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষতমা বাড়াতে অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান। তাছাড়াও পুদিনা পাতায় লৌহ, ম্যাঙ্গানিজ ও পটামিয়াম রয়েছে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়ে তোলে ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

পুদিনা পাতার ব্যবহার

পুদিনা পাতা এক ধরনের ভেষজ ঔষধি উদ্ভিদ। পেটের পীড়া বা বদহজমে পুদিনা পাতার রস বিশেষ কার্যকারি। তৈলাক্ত যুক্ত খাবার বা খাবার খাওয়ার অনিয়ম হলে অনেক সময় গ্যাট্রিক বা এসিডিটির সমস্য হয়। পুদিনা পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে সেবন করলে  গ্যাট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা নিবারন হয়। নিয়মিত পুদিনা পাতার রস খেলে পেটের বায়ু নির্গত হয়। পুদিনা পাতায় রোজমেরিক এসিড উপাদান থাকে যা শ্বাস-প্রশ্বাসের নালি খুলে দেওয়ার কাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে ও অ্যাজমা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে। ঠান্ডালাগা, কাশির ও কফ সমস্যায় পুদিনা পাতা একটি খুব কার্যকারি ঔষধ হিসাবে কাজ করে। গরম পানিতে পুদিনা পাতা ফুটিয়ে সেই ফুটানো পানির গরম ভাপ নিলে ও গরগড়া করলে উপকার পাওয়া যায় এবং ব্যথানাশক হিসাবে বেশ ভালো কাজ করে। পুদিনা পাতায় উচ্চমাত্রায় স্যালিসাইলিক অ্যাসিপ থাকে যা ব্রণ দূর করে ত্বক পরিষ্কার করতেও বেশ ভালো কাজ করে ও মানবদেহের মৃত কোষ দূর করে এবং কড়াপাড়া অংশকে স্বাভাবিক করে তুলতে কার্যকরি ভূমিকা রাখে।

আরও পড়ুনঃ অ্যালোভেরা ব্যবহারের  নিয়ম ও অ্যালোভেরার উপকারিতা কি

পুদিনা পাতা পাচনতন্ত্রের জন্য খুব উপকারি একটি ভেষজ। বদহজম সমস্যায় পুদিনা পাতার রস প্রাকৃতিক ভেষজ হিসাবে কাজ করে। আবার এটিতে অ্যান্টিসেপটিক রয়েছে, যা বদহজম ও পেটের পীড়া দূর করতে সাহায্য করে ও কোলনের পেশী সংকোচন নিয়ন্ত্রন করে থাকে এবং ক্ষত বা ঘা নিরাময়ে বেশ কার্যকরি।

পুদিনা পাতার রস সেবনের বিশেষ উপকারিতা আপনাদের সবারই অজানা। নিয়মিত খালি পেটে পুদিনা পাতার রস সেবন করলে হার্ট, লাং ও ফুসফুস ভালো থাকে এবং শরীরের অস্বাভাবিক চর্বি ক্ষয় করে। করোনায় আক্রান্ত রুগীদের জন্য পুদিনা পাতার রস খুব উপকারি একটি ভেষজ ঔষধ।  

প্রাচীন কাল যুগে আধুনিক কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিলোনা তাই প্রাচিন যুগের মানুষেরা চিকিৎসা হিসাবে ভেষজ ঔষধি উদ্ভিদের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হতো। সেই বিভিন্ন ভেষজ ঔষধি উদ্ভিদের মধ্যে পুদিনা পাতা একটি  ভেষজ ঔষধি উদ্ভিদ। এই ভেষজ উদ্ভিদ দ্বারা দেহের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হতো। পুদিনা পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এটি হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পুদিনা পাতায় এন্টিমেস্থল থাকে যা নিয়মিন ব্যবহারের ফলে দাঁতের মাড়ি শক্ত করে তোলে ও দাঁত থেকে রক্ত নির্গানস বন্ধ করে আবার পুদিনা পাতা নিয়মিত চিবিয়ে খেলে মুখের ঘা ইনফেকশান ও দর্গন্ধ ভালো হয়। 

আবার পুদিনা পাতায় প্রচুর পরিমানে মনোটারপিন উপাদান রয়েছে, যা মানব দেহে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে থাকে। পুদিনা পাতা নিয়মিক ভাবে খাদ্যভাস করলে চুলপড়া ও মাথায় খুশকির সমস্যা, চোখের ছানি, দাঁতের সমস্যা, পেটের পীড়া সমস্যা, ঠান্ডালাগা, সর্দি-কাশি, অ্যাজমা আরও ইত্যাদি সমস্যা সহ স্কিন ক্যান্সার ও মেয়েদের স্তন ক্যান্সার হওয়া থেকে রক্ষা করে।

 ত্বকের সমস্যায় পুদিনা পাতার ব্যবহারের উপকারিতা

পুদিনা পাতা ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যায় সেটা অনেকেরই অজানা। ত্বকের যত্নে পুদিনা পাতার ব্যবহারের গুনাগুন ও উপকারিতা সমদ্ধে যেনে নেয়া যাক। পুদিনা পাতার পেস্ট তৈরি করে তা মুখে লেয়ার প্রলেপ করে ব্যবহার করে মুখের যত্ন নেয়া যায় তবে পুদিনা পাতার পেস্ট এর সাথে মধু আর অ্যালোভেরার জেল একসাথে পেস্ট করে রূপচর্চার মাধ্যমে মুখের ত্বকের যত্ন নেয়া যায়।

নিয়মিত পুদিনা পাতা ব্যবহারের ফলে ত্বকের তৈলাক্ত ও শুষ্কতা ভাব দূর হয় এবং মসৃণ ও নরম হয়। প্রায় কমবেশি যুবক যুবতিদের মুখে ব্রন, কালচে ভাব বা অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়, যা পুদিনা পাতা ব্যবহারের ফলে উক্ত সমস্যাগুলি দ্রুত নিরাময়ে কাজ করে। পুদিনা পাতা এমন একটি প্রাকৃতিক ভেষজ উদ্ভিদ যা বাসা বাড়িতে খুব সহজে চাষবাদ করা যায়। নিয়মিত পুদিনা পাতার রস সেবন করলে মনবদেহের রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকে। 

ওজন কমাতে পুদিনা পাতার উপকারিতা

অস্বাভাবিক মোটা ও অস্বাভাবিক ওজন নিয়ে বর্তমানে মানুষ নানা বিভ্রান্তির মধ্যে পড়ে আছে। বর্তমান আধুনিক যুগে সবাই ব্যস্ত, তাই সবাই চাই খুব সহজে অস্বাভাবিক মোটা ও অস্বাভাবিক ওজন কমাতে। আবার যাদের স্বাস্থ্য ভালো ও ওজন নিয়ন্ত্রনে আছে তারা  বুঝে উঠতে পারেনা যে কি করলে বা কি খাবার খেলে নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে পারবে। বাজারে ওজন কমানোর নানা ধরনের প্রোডাক্ট পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করে কোন রেজাল্ট পাওয়া যায় না। যে সকল মানুষ অস্বাভাবিক মোটা ও অস্বাভাবিক ওজনের সমস্যায় ভুগছেন পুদিনা পাতা তাদের জন্য একটি মহান সমাধান। নিয়মিত পুদিনা পাতার রস খেলে এ সকল সমস্যা খুব সহজেই সমাধান সম্ভব।

যাদের ওজন অস্বাভাবিক বেশি তারা নিয়মিত প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তিন থেকে চারটা করে পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন। শুধু এভাবে মুখে চিবিয়ে খেতে না পারেন তাহলে শিল পাটায় বেটে পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন অথবা মধুর আর কালোজিরার গুড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। নিয়মিত প্রতিদিন সকালে পুদিনা পাতা খালি পেটে সেবন করলে অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা খুব সহজেই সমাধান সম্ভব।

কিছু পুদিনা পাতা এক গ্লাস পানিতে দিয়ে গরম করে ভালো ভাবে ফুটিয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিবেন। কিছুক্ষণ পরে চেক করে দেখবেন যখন পানি ঠান্ডা হয়ে হালকা কুসুম গরম থাকবে তখন পানি পান করে নিবেন। আবার চায়ের সাথেও পুদিনা পাতা পুঠিয়ে সেই চা পান করতে পারেন। নিয়মিন এভাবে পুদিনা পাতা সেবন করলে আপাদের অস্বাভাবিক ওজনের সমস্যা সমাধান হবে ও উপকারিতা পেতে পারেন।

চুলের যত্নে পুদিনা পাতার উপকারিতা

সব মানুষের আশা প্রত্যাশা সুন্দর ও সিল্কি মসৃম ঘন কালো চুলের। বর্তমানে প্রায় সকল মানুষের কমন সমস্যা হলো মাথা থেকে চুল ঝড়ে যাওয়া আর অল্প বয়সে চুল পেকে সাদা হয়ে যাওয়া। এগুলো সমস্যার সমাধানের জন্য আপনারা পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। পুদিনা পাতার সাথে টক দই, কাগজি লেবুর সর, মেহেদি পাতা ও আমলকি একসাথে মিশিয়ে শিল পাটায় বেটে বা ব্লিনডারে ভালো ভাবে ব্লেন্ড করে পেস্ট বানিয়ে চুলে লাগিয়ে একঘণ্টা রেখে দিবেন। একঘণ্টা পরে শ্যাম্পু দিয়ে ধয়ে নিবেন । এভাবে সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করবেন আশা করি উপকারিতা পাবেন। পুদিনা পাতা চুল ঝড়া বন্ধ করে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।

অনেক সময় মাথার ত্বক জ্বালাপোড়া করে আবার মাথা গরম হয়ে যায় তখন পুদিন পাতা বেটে মাথায় লাগিয়ে পনের থেকে বিশ মিনিট রেখে তারপর ধুয়ে নিবেন দেখবেন মাথার ত্বকের জ্বালাপোড়া ও গরম হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে এবং আপনি অনেকটাই আরাম পাবেন। পুদিনা পাতা মাথা জ্বালাপোড়া ও মাথা গরম হওয়া সমস্যা নিবারনে অনেকটাই কার্যকরি ভূমিকা পালন করে থাকে। পুদিনা পাতায় এ্যান্টিব্যাকটেরিয়া উপাদান থাকার ফলে এটি মাথার  ত্বককে ভালো ও ঠান্ডা রাখে এবং মস্তিষ্কও ভালো রাখে।

পুদিনা পাতার জুস ও উপকারিতা

পুদিনা পাতার জুস বানিয়ে খাওয়া যায় অনেকেই তা জানেন না। আজ আপনাদের পুদিনা পাতার জুস বানিয়ে খাওয়ার পদ্ধতি জানিয়ে দিই। পুদিনা পাতা এক প্রকার গুল্মজাতীয় ভেষজ উদ্ভিদ। দশ থেকে পনেরটি পুদিনা পাতা, এক ফালি লেবুর রস, চিনি পরিমান মত (মিষ্টি বেশি খেলে চিনির পরিমান বাড়িয়ে দিতে পারেন), বরফ এক টুকরো, এক চিমটি বিট লবণ ও পরিমান মত পানি দিয়ে ভালোভাবে জুস মেকারে ব্লিড করে মিক্সড করে জুস বানিয়ে নিবেন।পুদিনা পাতার জুস খাওয়ার ফলে পেটের বিভিন্ন প্রকার সমস্যা দূর হয় বিশেষ করে গ্যাস্টিক ও এসিডিটি, পেট ফাঁপা বা জ্বালাপোড়া করা, কোষ্ঠকাঠিন্য সহ আরও ইত্যাদি সমস্যা নিবারন হয়।

আরও অনেক ভাবে পুদিনা পাতার জুস করে খাওয়া যায়। যেমন পুটিনা পাতার একটি ছোট পরিমান আটি (পুদিনা পাতা আটি থেকে আলাদা করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন), বরফ পরিমান মত, চিনি দুই টেবিল চাকুচ, ভাজা শাহী জিরার গুড়া, কালোজিরার গুড়া, আমলকি দুইটি, বিট লবণ পরিমান মত, লেবুর রস ও পানি পরিমান মত দিয়ে ভালোভাবে জুস মেকারে ব্লিড করে মিক্সড করে জুস বানিয়ে নিবেন। আপনারা রমজাম মাসে এভাবে পুদিনা পাতার জুস বানিয়ে ইফতারিতে খেতে পারেন তাতে শরীরে এনার্জি পানের অনেক উপকারে আসবে।

আরও পড়ুনঃ আমলকির গুনাগুন সর্ম্পকে বিস্তারিত জানুন

পুদিনা পাতা, পরিমান মত বিট লবণ, লেবুর রস, আখের রস, এক টুকরো বরফ এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে শরবত বানিয়ে নিতে পারেন। এভাবে খেলেও অনেক উপকৃত হবেন মাথা ও শরীর ঠান্ডা থাকবে এবং এভাবে শরবত বানালে অনেক সুস্বাদু হয়।

রান্নায় পুদিনা পাতার ব্যবহার

রান্নার কাজে পুদিনা পাতা খুব উপকারি প্রাকৃতিক উপাদান। গরুর গোস্ত, খাশির গোস্ত, মুরগি গোস্ত, হাঁসের গোস্ত বা যেকোন ধরনের মাছের তরকারিতে পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন। এ সকল তরকারিতে পুদিনা পাতা ব্যবহারের করলে খাবারের স্বাদ দ্বিগুন বেড়ে যায়। যেকোন ধরনের তরকারি রান্নার শেষের পথে পুদিনা পাতা কুঁচি কুঁচি করে কেটে তরকারির উপরের ছিটিয়ে দিবেন দেখবেন খানারের স্বাদ বেড়ে গেছে সবাই রান্নার  প্রসংশা করছে। পুদিনা পাতায় মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।

পুদিনা পাতা এক ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ তাই চিকিৎসা ছাড়াও এ উদ্ভিদ নানান কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সব্জির সাথেও পুদিনা পাতা রান্না করে খেতে পারেন। নিয়মিত রান্নায় পুদিনা পাতা ব্যবহার করলে মানবদেহের নানান রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। খাবারে পুদিনা পাতা ব্যবহারে খাবারের সুন্দর্য বৃদ্ধি পায়। এক কথায় বলা যায় মানবদেহের জন্য পুদিনা পাতার উপকারিতা অপরিসীম। 

পুদিনা পাতার বিভিন্ন রকম উপকারিতা

পুদিনা পাতার ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতার সম্পর্কে বলে শেষ করা সম্ভব না। তারপরও কিছু উপকারিতা তুলে ধরলাম।

  • পেটের পীড়া, পেট ফাঁপা বা পেট জ্বালাপোড়া দূর করতে পুদিনা পাতার ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা অপরিসীম। যেকোন কারণবশত যদি পেটের পীড়া, পেট ফাঁপা বা পেট জ্বালাপোড়া করে তাহলে দিনে তিনবার পুদিনা পাতার রস করে সেবন করুন।
  • পুদিনা পাতার রসের সাথে মধু, কালোজিরার গুড়া মিশিয়ে খেলে নিউমোনিয়া রোগ থেকে নিবারন পাওয়া যায়।
  • পুদিনা পাতার সর খেলে পেটের বায়ু নির্গাসন হকে সাহয্য করে।
  • পুদিনা পাতার চিবিয়ে খেলে দাঁতের মাড়ি শক্ত হয় ও দাঁতের অন্যান্য সমস্যা দূর হয়।
  • পুদিনা পাতার সর সেবন করলে মাথা ব্যথা ভালো হয়।
  • পুদিনা পাতার জুস বমন ভাব দূর করে মুখে রুচি আসনে সাহায্য করে।
  • পুদিনা পাতা খাওয়ার ফলে পায়ুপথ দিয়ে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়।
  • পুদিনা পাতা ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।
  • পুদিনা পাতা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে।
  • পুদিনা পাতা ডায়রিয়া জনিত রোগ প্রতিরোধের সহয়তা করে।
  • পুদিনা পাতা নাকে নিয়ে গন্ধ শুকলে মাথা ব্যথা কমে যায়।
  • পুদিনা পাতার সর ও অ্যালোভেরা জেল একসাথে মিশিয়ে ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যায়।
  • পুদিন পাতা গ্যাস্টিক ও এসিডিটি সমস্যা নিবারনে খুব উপকারি। 
পুদিনা পাতার বিভিন্ন প্রকার ব্যবহার জানুন

পুদিনা পাতা বিভিন্ন প্রকার ভাবে ব্যবহার করা যায়। বর্তমানে পুদিনা পাতা বিভিন্ন খাবারের সাথে ব্যবহার করে খাবারকে মুখরোচক করে তোলা হয়। গরুর গোস্ত, খাসির গোস্ত, মুরগির গোস্ত, হাঁসের গোস্ত, মাছ, সবজি, ডাল আবার গরু, খাসি, মুরগির গোস্তের কাবাব, মাছের কাবাব, ভর্তা, চাটনী সহ বিভিন্ন ফাস্টফুট স্ন্যাক জাতীয় খাবারেও পুদিনা পাতা ব্যবহার হচ্ছে। আবার জুস, শরবত, সুপ, চকলেট আরও বিভিন্ন ভাবে পুদিনা পাতার ব্যাপকভাবে ব্যবহার  হচ্ছে।  

নিয়মিত ভাবে পুদিনা পাতা, থানকুনি পাতা ও তুলসী পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে শরবত বানিয়ে তা সেবন করলে মেয়েদের শারীরিক অনেক সমস্যার নিরাময়ে হয়। মেয়েদের অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা নিরাময়ে ও উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে পুদিনা পাতা বেশ কার্যকারি ভেষজ ঔষধ। আবার শিশুদের পেট ফাঁপা বায়ু নির্গাসন না হওয়ার ঠান্ডালাগা সর্দি-কাশি বুকে কফ জমে থাকা খাবারের প্রতি অরুচি এ ধরনের সমস্যা নিবারনে পুদিনা পাতার রস খুব ভালো কাজ করে।  

চুলে খুশকি বা উকুন হলে তা নিরাময় করার জন্য পুদিনা পাতা খুব কার্যকারি। পুদিনা পাতা শিলপাটায় বেটে পেস্ট তৈরি করে তার সাথে লেবুর রস মিশিয়ে সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন মাথার চুলে ব্যবহার করলে খুশকি ও উকুন নিরাময় করা সম্ভব। বর্তমানে পুদিনা পাতা মেয়েদের রূপচর্চার কজেও ব্যবহার হচ্ছে। পুদিনা পাতা, অ্যালোভেরা, শসা ও গোলাপজল এক সাথে মিশিয়ে তার পেস্ট তৈরি করে মেয়েদের মুখের ত্বকের রূপচর্চার কাজে ব্যবহার করা হয়। 

পুদিনা পাতার অপকারিতা কি তা জানুন

পুদিনা পাতা স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য প্রাকৃতিক ভাবে নানান উকারিতা নিয়ে আসে। হজমশক্তি বৃদ্ধি, সর্দি-কাশি কফ নিরাময় ও ত্বকের যত্নে ভালো উপকারি একটি ভেষজ। কিন্তু অতিরিক্ত পরিমান পুদিনা পাতা সেবন করলে তার কিছু ক্ষতিকর প্রভাব দেখা দিতে পারে, যা পরবর্তীতে স্বাস্থ্য সমস্যার কারন হয়ে দারাতে পারে। তবে চলুন পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক সমদ্ধে জেনে নেয়া যাক।

কিছু কিছু ব্যক্তির মধ্যে অম্বল বা অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে তাছাড়াও পাচনতস্ত্রের উপর এর প্রশান্তিদায়ক প্রভাব থাকা সত্ত্বেও অত্যাধিক পরিমাণ পুদিনা পাতার চা সেবনের ফলে প্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ রোগীদের ক্ষেত্রে লক্ষগুলিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড নির্গাসন করে হজমশক্তি কমিয়ে হজমের সমস্যা তৈরি করেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ তুলসি পাতার ঔষদি গুনাগুন ও উপকারিতা কি

না যেনে অতিরিক্ত পরিমাণে পুদিনা পাতার রস বাচ্চাদের সেবন করালে শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপার বাচ্চাদের পুদিনা পাতার রস সেবন করানো ভালো। 

রক্তচাপ কমাতে পুদিনা পাতা বেশভালো কাজ করে। কিন্তু যাদের রক্তচাপ স্বাভাবিক পরিমাণের থেকে কম তাদের জন্য পুদিনা পাতা সেবন করা বিপদজ্জনক হতে পারে। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা পুদিনা পাতা সেবনের ফলে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া অনুভাব করে। ত্বক চূলকায় এবং লালচে ভাব হয়, ঘামাচির মত ফূসকুড়ি দেখা দেয় ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা সৃষ্টি হয়।

গর্ভবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণ পুদিনা পাতা সেবন করলে শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটতে পারে ও গর্ভে থাকা শিশুর জন্য তা ক্ষতিকর দিক হতে পারে তাই গর্ভবতী মহিলাদের পুদিনা পাতা সেবনে সতর্ক থাকা দরকার ও চিকিৎসকের পরামর্শ দেওয়া দরকার।

পুদিনা পাতা যদিও স্বাস্থ্যে জন্য উপকারি ভেষজ উদ্ভিদ, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করার ফলে পেটব্যথা, বমন ভাব, অ্যাসিডিটি, অ্যালার্জিক সহ কিছু ক্ষতিকর প্রভাব দেখাদিতে পারে। তাই শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে মাত্রাধিক পরিমান পুদিনা পাতা সেবন না করাই স্বাস্থ্যর জন্য ভালো।

পুদিনা পাতা সাধারণত স্বাস্থ্যকর, ভেষজ ঔষধি ও নানান উপকারিতার জন্য পরিচিত একটি উদ্ভিদ। তবে, অতিরিক্ত পরিমাণ সেবনে কিছু ক্ষতিকর দিক দেখা দিতে পারে। অম্বল বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যারা ভুগছেন বিশেষ করে তাদের জন্য ‍পুদিনা পাতা হজমের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া পুদিনা পাতা অতিরিক্ত বেশি পরিমাণে সেবনের ফলে গলায় ও পেটে জ্বলা-পোড়া মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং পুদিনা পাতা সেবনের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকা জরুরি।

শেষ কথা 

শুধু স্বাধের মধ্যেই পুদিনা পাতা সীমাবদ্ধ নয় এর ভিতর লুকিয়ে রয়েছে ঔষধি অনেক গুনাগুন ও সুস্থ্য থাকার প্রাকৃতিক উপাদান যা পেটের পীড়া, হজম শক্তি, সর্দি-কাশির উপশম নিরাময়, ত্বকের যত্ন ও ত্বকের সমস্যা নিরাময় সহ মানবদেহের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা এবং মানসিক প্রশাস্তি। এই সহজ লভ্য পুদিনা পাতাটি হতে পারে আপনার আমার দৈনন্দিন সুস্থ্য জীবনের বিশ্বস্থ সঙ্গী।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোস্টের মাধ্যমে আপনি পুদিনা পাতার ঔষধি গুনাগুন ও উপকারিতা এবং অপকারিতা সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে ‍যদি আপনার কোন প্রশ্ন অথবা গুরুত্বপূর্ণ মতাতম থেকে থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং সকল প্রকার তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

kbfj24.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url