ইউটিউব থেকে টাকা আয় করে কিভাবে তা জানুন

বর্তমান সময়ে ঘরে বসে অনেকেই ইউটিউব চালিয়ে টাকা আয় করছে। সারা বিশ্বব্যাপী প্রায় ২০০ কোটির বেশি মানুষ ইউটিউব দেখে নিয়মিত ভাবে। প্রায় প্রতি মিনিটে ৫০০ ঘণ্টার বেশি ভিডিও স্ট্রিম হয় এই প্ল্যাটফর্মে। তাহলে, আসলেই কি ইউটিউবে শুধু ভিডিও আপলোড করে টাকা আয় করা সম্ভব? না অনেকে মাঝপথে হতাশ হচ্ছে।

ইউটিউব-থেকে-টাকা-আয়-করে-কিভাবে

এই পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারবেন সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়ম অবলম্বন করে কিভাবে সফলতার সাথে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায়। এবং কি করলে একজন দক্ষ ও সফল ইউটিউবার হওয়া যায়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ইউটিউব থেকে টাকা আয় করে কিভাবে তার বিস্তারিত তথ্য

ইউটিউব থেকে টাকা আয় করে কিভাবে

বিশ্বব্যাপী প্রায় সব মানুষই যেনে গেছে ইউটিউব এখন শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং ঘরে বসে থেকে টাকা আয় করার একটি অন্যতম উপায়। ইউটিউবকে অনেক মানুষ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছে এবং বেকারত্বের মহামারি যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্লগাররা মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আয় করেছেন। তবে, কিভাবে ইউটিউব এর মাধ্যমে টাকা আয় করে সেটা জানার জন্য কিছু ধাপ অনুসরন করা জরুরি। নিম্নে কিছু ধাপ উল্লেখ করা হলো-

আরও পড়ুন 

  • প্রথমে শুরুতেই ইউটিউবে একটি একাউন্ট খুলতে হবে ও একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে নিয়ে চ্যানেল তৈরি করতে হবে। 
  • কোন ধরণের ভিডিও দর্শকরা বেশি দেখে বা পছন্দ করে সেটি আগে নির্ধারণ করতে হবে এবং আপনার ভিডিও কোন দর্শকদের কাছে নিয়ে যেতে চান তা ঠিক করতে হবে। এরপর ভিডিও তৈরির জন্য উপযুক্ত বিষয়বন্তু পছন্দ করতে হবে। তারপর সেই দর্শকদেরকে উদ্দেশ্যকরে ভিডিও তৈরি করে দর্শকদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
  • চ্যানেল যেকোন বিষয়ের উপর হতে পারে, যেমন- ফুডব্লগ, ভ্রমন, পড়ালেখা, রান্না ইত্যাদি। তবে, পছন্দ ও শখের উপর নির্ভর করে বিষয়বস্তু নির্বাচন করা উচিৎ।
  • একটি উন্নমানের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে হবে, উন্নতমানের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন ও আলো আপনার ভিডিওকে প্রফেশনাল লুক দিতে সাহায্য করবে।
  • নিজের ভিডিও হতে হবে ও নিয়মিত পোস্ট করতে হবে এবং প্রত্যেক ভিডিওর সাথে কি-ওয়ার্ড সংযুক্ত করতে হবে। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ও ব্লগিং ওয়েবসাইটে ট্র্যাকিং নিতে হবে। অন্যের ব্যবহৃত ভিডিও বা কপিরাইট ভিডিও আপলোড করা যাবে না। এমন ভিডিও হতে হবে যেটা একান্তই শুধু আপনার তৈরি করা অন্য কেউ ব্যবহার করেনি।
  • দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে এমন ভালো মানের ভিডিও, থাম্বনেইল ও টাইটেল হতে হবে। আমরা সাধারণত ইউটিউবে বিনোদন মূলক ও ছোট ভিডিও দেখতে পছন্দ করি তাই সেই দিক খেয়াল রেখে ভিডিও করাই ভালো। ভিডিওগুলোর দৈর্ঘ মাঝারি আকারের হতে হবে অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৫ থেকে ১০ মিনিট। বড় ভিডিও ছাড়তে পারেন, তবে, মাঝে মাঝে।
  • শর্ট ভিডিওর ক্ষেত্রে ৯০ দিনে অথ্যাৎ গড়ে ৩ মাসে মোট দশলক্ষ ভিউ থাকতে হবে। ১ বছরের মধ্যে ১,০০০ জন সাবস্ক্রাইবার এবং ৪,০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম বা তার বেশি থাকতে হবে। তবে, উল্লেখ যে, এই শর্ত যদি এক বছরের আগে পুরণ করতে পারেন তাহলে এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মনিটাইজেশন চালু করতে পারবেন।
  • ইউটিউব মনিটাইজেশন পেতে হলে চ্যানেলে কমপক্ষে সর্বনিম্ন সাবস্ক্রাইবার ১,০০০ জন ও ওয়াচ টাইম ৪,০০০ ঘণ্টা বা তার বেশি হতে হবে। একটা বিষয়ে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে শুধু ভিডিও আপলোড করলেই হবে না তার সাথে সাবস্ক্রাইবার এবং ওয়াচ টাইম বাড়াতে হবে সে বিষয়টা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। এই সবগুলো শর্ত পূরণ হলে গুগল এডসেন্স অ্যাকাউন্টের মাধ্যম দ্বারা ভিডিওতে এডস দেখানোর মাধ্যমে টাকা আয় করা যেতে পারে। এছাড়া টাকা আয় করার আরও বেশ কিছু উপায় হলো-

    • মেম্বারশিপ ও সুপারচ্যাটঃ আপনাকে লাইভ ভিডিওতে ভক্তরা টাকা পাঠাতে পারে।
    • স্পন্সরশিপ ও বিজ্ঞাপনঃ বিভিন্ন ব্যান্ড থেকে অর্থ দিবে যদি তাদের পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন আপনার ভিডিওতে তুলে ধরেন। 
    • অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংঃ বিভিন্ন কম্পানীর প্রোডাক্টের লিংক দিয়ে কমিশন পেতে পারেন।

এই শর্ত ও নিয়মগুলো মেনে চলতে পারলে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার সম্ভবনা রয়েছে। অনেকেই আছে যারা ঘরে বসে থেকে টাকা আয় করতে চায়, ইউটিউব তাদের জন্য টাকা আয় করার একটি অনেক সহজ প্ল্যাটফর্ম হতে পারে। তবে, এরজন্য ভালো দক্ষতার  প্রয়োজন হবে, তা নাহলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। এই পোস্টে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার সকল তথ্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। একজন দক্ষ ও সফল ইউটিউবার হতে চাইলে আমাদের সাথে থাকুন এবং পোস্টিটি সম্পর্ণ পড়ুন।

ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার সেরা ৫ টি  উপায়

বর্তমান সময়ে ইউটিউব ব্যবহার করেনা এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। বিনোদন ও প্রয়োজন উভয় ক্ষেত্রেই এই প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার উর্ধগতিতে বেড়েই চলেছে। বিনোদনের চাহিদা যেমন হারে বাড়ছে ঠিক তেমন হারে প্রয়োজনের চাহিদাও বাড়ছে। ইউটিউব এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিনোদনের পাশাপাশী টাকাও আয় করা যায়। ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার অনেকগুলো উপায় রয়েছে। তার মধ্যে সেরা ৫ টি উপায় নিম্নে তুলে ধরা হলো-

আরও পড়ুনঃ

১) বিজ্ঞাপন থেকে টাকা আয়ঃ ইউটিউব চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা আয় করা একদম প্রাথমিক একটি উপায়। বেশিরভাগ ইউটিউবার তার ভিডিওতে বিভিন্ন ব্যান্ডের পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দেখানো মাধ্যমে টাকা আয় করে থাকেন। ইতিপূর্বে আপনারা খেয়াল করেছেন হয়তো ইউটিউবে ভিডিও শুরু হওয়ার আগে ও পরে অথবা ভিডিও চলাকালীন সময়ে যে বিজ্ঞপান দেখানো হয় সেখানে থেকে টাকা আয় হয়ে থাকে। তবে, ইউটিউব কর্তীপক্ষ প্রত্যেকটি বিজ্ঞাপন থেকে নিজে কি পরিমাণ অর্থ আয় করছে সেই ব্যাপারটি তারা নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে।

ইউটিউবাররা সেই ব্যাপারে জানতেও পারেনা বা ইউটিউব কর্তীপক্ষ জানতেও দেয়না তারা বিজ্ঞাপনটি থেকে কি পরিমাণ অর্থ আয় করছেন। তবে, এখানে একটা মজার বিষয় হলো এই যে, যদি আপনার কোন ভিডিও একবার জনপ্রিয়তা পেয়ে যায় তাহলে ঐ ভিডিও আপনার চ্যানেলে যতদিন থাকবে ঠিক ততদিনি টাকা আয় হতে থাকবে। আপনার ঐ ভিডিওতে যতদিন বিজ্ঞাপন দেখানো হবে ততদিন পর্যন্ত টাকা আয় হতে থাকবে। সাধারণত ইউটিউবে এভাবেই প্রথম থেকে টাকা আয় করে থাকে বেশিরভাগ ইউটিউবাররা। এটিকে এ জন্যই বলা হয় ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার প্রাথমিক উপায়।

তবে, চ্যানেল তৈরি করেই ভিডিও আপলোড করার সাথে সাথে টাকা আয় করতে পারবেনা। এটাকে যতটা সহজ উপায় বলে মনে হচ্ছে আসলে কিন্তু বিষয়টি ততটা সহজ ব্যাপার না। কারণ, আপনার চ্যানেলটি টাকা আয় করার জন্য যোগ্যতা আছে কিনা সে বিষয়ে একটি পরীক্ষায় পাশ করতে হবে ও কিছু নিয়ম পালন করতে হবে। আর সে বিষয়টি হলো বিগত এক বছরের মধ্যে আপনার চ্যানেলের ভিডিওগুলোতে ১,০০০ জন সাবস্ক্রাইবার এবং ৪,০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে। এছাড়া, আপনার ইউটিউবে ১০০ ডলার যতক্ষণ না আয় হবে ঠিক ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার একাউন্টে কোন অর্থ যোগ হবে না।

২) অ্যাফিলিয়েট লিংকের মাধ্যমে ইনকামঃ বিজ্ঞাপন থেকে আপনি যে পরিমাণ টাকা আয় চাইবেন ঠিক সেই পরিমাণ টাকা আয় হয়না। ইউটিউবাররা তাই আরও ক্রিয়েটিভ উপায়ে আয় করার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করেছে। এ জন্য আপনাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে বিজ্ঞাপনের চুক্তিতে যেতে হবে। তাদের পণ্যের লিংক ভিডিওর ড্রেসক্রিপশনে দিতে রাখতে হবে ও ভিডিওর মধ্যে আপনাকে পণ্যটির বিষয়ে বলে দিতে হবে। গ্রাহকরা ঐ লিংকে ক্লিক করে পণ্যটি ক্রয় করলে তা থেকে একটি নিদিষ্ট পরিমাণ কমিশন হিসেবে আপনি পেয়ে যাবেনা। তাতে করে প্রতিষ্ঠানের লোভ্যাংশের পাশাপাশি আপনারও লোভ্যাংশ হয়ে যাবে।

এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রয়ের সাথে প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এর কাজও হয়ে যাবে। আপনাকে একটি বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, যে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করছেন অর্থাৎ পরোক্ষভাবে অন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন তাই অবশ্যই পণ্যটি বিক্রি করার দিকে বিশেষভাবে উদ্যোগী হতে হবে। ভিডিও দেখতে শুধু ভালো হলেই হবে না, মোশন গ্রাফিক্স ও যথাযথ এডিটিং পর্যাপ্ত থাকা প্রযোজন আছে, নয়তো আপনার ভিডিও দর্শকদের কাছে খুব একটি চমকপ্রদ বলে নাও হতে পারে তাদের মনে। 

৩) ডোনেশস এর মাধ্যমে টাকা আয়ঃ আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ফ্যানরা ভিডিও দেখে আপনাকে নিজের পকেট থেকে কিছু পরিমাণ অর্থ ডোনেট করার প্রক্রিয়াটিও আছে ইউটিউবে। তবে, প্রক্রিয়াটির একটি মাধ্যম আছে। এটি প্যাট্রেয়ন নামক প্রক্রিয়া দ্বারা হয়ে থাকে। ইউটিউবাররা তাদের দর্শকের কাছ থেকে চ্যানেলের জন্য কিছু অর্থ ডোনেটশন পায় সে জন্য মূলত এই প্রক্রিয়াটি করা হয়েছে। 

৪) পণ্য বিক্রয় করে টাকা আয় করাঃ নিজের পণ্য বিক্রয় করে টাকা আয় করার সহজ উপায় হলো, যেসব সকল ইউটিউবারদের অনেক বেশি ফলোয়ার থাকে তাদের জন্য এটি খুব সহজ একটি পন্থা হয়ে থাকে। নিজের চ্যানেলের লোগো দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে সেটা চ্যানেলের ফলোয়ারদের কাছে বিক্রি করা যেতে পারে এবং বাইরের দেশগুলোতেও প্রচার হতে পারে। এই পন্থা ব্যবহার করে ইউটিউবাররা প্রচুর পরিমাণে টাকা আয় করেছেন এবং খুব সহজে অনেক টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন।

৫)স্পন্সরশিপের মাধ্যমে টাকা আয় করাঃ যে সকল ইউটিউবারদের চ্যানেলে আগে থেকেই অনেক ভিউয়ার ও ফ্যান আছে তাদের জন্য টাকা আয় করার অন্যতম আরেকটি উপায় হলো স্পন্সরশিপ। কোন প্রতিষ্ঠান আপনাকে টাকা দিবে যাতে করে আপনার ভিডিওতে সেই প্রতিষ্ঠানের কথা আপনি উল্লেখ করেন। তাতে করে আপনার টাকাও আয় হলো এবং প্রতিষ্ঠানের প্রচার ও লাভ দুটোই হয়ে গেলো।

আবার কোন প্রতিষ্ঠান আপনাকে এতো পরিমাণ অর্থ দিবে যে, আপনি এমনভাবে ভিডিও তৈরি করবেন যেখানে শুধু ঐ প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ থাকবে এবং দর্শকের চোখে পড়বে। বিষয়টা অনেকটা এমন যে, আপনার একটি টিভি চ্যানেল আছে এবং সেখানে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কেউ অর্থায়ন করছে। কেবলমাত্র কোন প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রচার-প্রচারনার জন্য আপনাকে অর্থায়ন করতে ইচ্ছুক হবে। তবে, এভাবে অর্থ আয় করাও যে খুব সহজ কিছু বিষয়টি কিন্তু তেমন না। এভাবে অর্থ আয় করার জন্য আপনার চ্যানেলের ভিডিওগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিউ থাকতে হবে।

ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে ইনকাম

আপনি কি জানেন ভিডিও না বানিয়ে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা যায়? হ্যাঁ, আপনি সঠিক শুনেছেন। ভিডিও না বানিয়েও ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা সম্ভব। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ভিডিও না বানিয়েও কিভাবে ইউটিউব থেকে টাকা ইনকাম করা যায় তার বিস্তারিত আলোচনা।

বর্তমান বিশ্বজুড়ে বিনোদনের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হয়ে উঠেছে ইউটিউব। সাধারণত ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার জন্য নিজের তৈরি করা ভিডিও পোস্ট করতে হয়। তারপর মনিটাইজেশন চালু করার পর নিজের পোস্ট করা ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখানোর মাধ্যমে টাকা আয় করা যায়। এছাড়াও পোস্ট করা ভিডিওগুলো থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এবং স্পন্সরশিপের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা যায়। তবে, আপনি হয়তো এটা জেনে অবাক হবেন যে, আপনার নিজের ভিডিও না বানিয়েও ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। নিম্নে কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো-

  • অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটনরদের ভিডিও শেয়ার করাঃ ইউটিউবে অ্যাগ্রিগেশন নামক একটি অপশন রয়েছে, যার মাধ্যমে অন্য কনটেন্টে ক্রিয়েটরদের তৈরি করা ভিডিও ইউটিউব আপনার চ্যানেলে পোস্ট করার সুযোগ দিয়ে থাকে। তাই ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার সহজ উপায় হলো নিজের ভিডিও না বানিয়ে নিজের চ্যানেলে থার্ডপার্টি অর্থাৎ অন্য জনের ভিডিও পাবলিশ করা মাধ্যমে টাকা আয় করা যায়।
  • ফ্রি স্টক ভিডিও ব্যবহার করাঃ ইউটিউবে ভিডিও না তৈরি করে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করার আরেকটি সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ফ্রি স্টক ভিডিও ব্যবহার করা। ফ্রি স্টক ভিডিও এবং ফ্রি মিউজিক সংগ্রহ করে এর সমন্বয়ে ভিডিও তৈরি করে আপনার চ্যানেলে পোস্ট করতে হবে। ফ্রি স্টক ভিডিও ও ফ্রি মিউজির ডাউনলোড করার জন্য কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যেগুলো থেকে আপনি ফ্রি স্টক ভিডিও ও ফ্রি মিউজির সংগ্রহ করতে পারবেন, তবে, মনে রাখতে হবে ভিডিও ও মিউজিকগুলো অবশ্যই ক্রিয়েটিভ কমন লাইন্সেস যুক্ত হতে হবে এবং কপিরাইট নিয়ম মেনে তাহলে গুগল কোন কপিরাইট ক্লেইম করবে না। নিম্নে কয়েকটি সাইট উল্লেখ করা হলো-

    • Adobe Stock
    • Pixabay
    • Pexels
    • Videvo
    • Sutterstock

এছাড়াও যখন আপনি ইউটিউবে চ্যানেল তৈরি করবেন আপনাকে তখন ইউটিউব অডিও লিব্রারি এর এ্যাকসেস দেওয়া হবে সেখান থেকে অসংখ্য কপিরাইট ফ্রি মিউজিক ফ্রি স্টক ভিডিওতে সংযুক্ত করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ 

  • ইউটিউব শর্টস বা টেক্সট টু স্পিচ ভিডিও তৈরি করাঃ ট্রেন্ডিং ইউটিউব শর্টস ক্লিপগুলো কনভার্ট করে নিজত্ব ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বা লেখা যোগ করে পোস্ট করতে পারেন। এছাড়াও টেক্সট টু স্পিচ সফটওয়্যারের মাধ্যম দ্বারা ভয়েস তৈরি করে ইনফো ভিডিও তৈরি করা। আবার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে অর্থ উপার্জন করা যায় নিজের ভিডিও না বানিয়ে ।

ইউটিউব থেকে আয় করার শর্ত

ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম (YPP) যোগদানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা যায়। তার জন্য কিছু যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, যেমন- ১ বছরের মধ্যে ১,০০০ জন সাবস্ক্রাইবার এবং ৪,০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম বা তার বেশি থাকতে হবে। এছাড়া, শর্ট ভিডিওর ক্ষেত্রে ৯০ দিনে অথ্যাৎ গড়ে ৩ মাসে মোট দশলক্ষ ভিউ থাকতে হবে। নিম্নে আরও কিছু শর্তগুলো উল্লেখ করা হলো-

  • চ্যানেল তৈরিঃ ইউটিউবে একটি নিজের চ্যানেল তৈরি করতে হবে। চ্যানেলটি কমিউনিটি গাইডলাইন এবং অ্যাডসেন্স প্রোগ্রামের শর্তাবলীর নিয়ম মেনেই তৈরি করতে হবে এবং অবশ্যই তা মেনে চলতে হবে।
  • সাবস্ক্রাইবার সংখ্যাঃ উক্ত চ্যানেলে সর্বনিম্ন ১,০০০ জন সাবইস্ক্রাইবার থাকা আবশ্যক।
  • ওয়াচ টাইমঃ গত ১২ মাসের মধ্যে ৪,০০০ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ওয়াচ টাইম থাকতে হবে। 
  • ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম (YPP) এর শর্তাবলীঃ
  • মনিটাইজেশনঃ সকল শর্তাবলী মেনে ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রাম (YPP) জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন গৃহিত হওয়ার পরে আপনার চ্যানেলের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করা করতে পারবেন।
  • কন্টেন্ট পলিসিঃ ইউটিউবে কন্টেন্ট পলিসি, আইন ও বিধি-নিষেধ শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং সকল শর্ত মেনে কন্টেন্ট তৈরি করা।
  • অ্যাডসেন্সে একাউন্টঃ ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার জন্য গুগল অ্যাডসেন্সে অ্যাকাউন্টের সাথে উক্ত ইউটিউব চ্যানেলটির লিঙ্ক সংযুক্ত করতে হবে।
  • সক্রিয়তাঃ নিয়মিত নিজের ভিডিও পোস্ট করা, লাইক, কমেন্ট, শেয়ার ও সাবইস্ক্রাইব করা। এবং ইউটিউব কমিউনিটিতে অংশগ্রাহণ করা, যথা- কমিউনিটি পোস্টগুলিতে প্রতিক্রিয়া জানানো এবং লাইভ স্ট্রিম দেখা বা হোস্ট করা।

ইউটিউব থেকে মাসে কত টাকা আয় করা যায়

দর্শকদের অবস্থান, ভিডিও ভিউ ও কন্টেন্টের ধরনের উপর নির্ভর করে ইউটিউব থেকে মাসিক আয় কত হবে। তবে, সাধারণত আমারা জানি ১,০০০ ভিউতে $1 ডলার থেকে $30 ডলার পর্যন্ত আয় হয়। কিন্তু এখানে আরেকটি বিষয় হলো আপনার দর্শক কোন দেশের তার উপরও নির্ভর করে আপনি কত টাকা পর্যন্ত পেতে পারেন। আপনার দর্শক মানে ভিউয়ার যদি ইরোপ বা আমেরিকার বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনি ইউটিউব থেকে অনেক বেশি পরিমাণে টাকা আয় করতে পারবেন। 

বাংলাদেশ বা এশিয়া মধ্যকার কয়েকটি দেশগুলোর দর্শকদের জন্য ইউটিউব টাকা পরিমাণ কম দেয়। তাছাড়া, আপনি যদি শিক্ষা বিষয়ক কন্টেন্ট করেন বা ব্লগ করেন তাহলে তুলনা মূলক ভাবে কিছু টাকা বেশি পেতে পারেন। আপনাকে এমন ভাবে ভিডিও তৈরি করতে হবে যেগুলো ভিডিও পুরো বিশ্বের দর্শকরা দেখতে পারে। একটি নির্দিষ্ট দর্শক টার্গেট রেখে প্রতিদিন ভিডিও ছাড়তে হবে, তাতে আপনার ভিউ বাড়ার সম্ভবনা বেশি থাকবে। যতবেশি পরিমাণ ভিউ বাড়বে আপনার তত বেশি টাকা আয় হবে।

ইউটিউবে কত সাবস্ক্রাইব হলে কত টাকা পাওয়া যায়

ইউটিউবে কি পরিমাণে বা কতগুলো সাবস্ক্রাইবার আছে তার উপর ভিত্তি করবে টাকা আয়ের পরিমাণ সরাসরি নির্ধারণ করা সম্ভব না। ইউটিউবে বিজ্ঞাপনের সংখ্যা, ভিডিও ভিউ, দর্শকদের ব্যস্ততা এবং অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ের উপর টাকা আয় মূলত নির্ভর করে। তবে, প্রতি মাসে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা উপার্জন করা সম্ভব যদি বেশিভালো পরিমাণে ভিউ ও ১,০০০ জন সাবস্ক্রাইবার থাকে।

আবার ৫০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা যায় কিন্তু এক লক্ষ বা তার বেশি সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে। অতএব, তাহলে বুঝতেই পারছেন যে, শুধু সাবস্ক্রাইবারের উপর নির্ভর না করে, বিজ্ঞাপন, ভিডিওর মান, ভিউ এবং ইউটিউবের বিভিন্ন টাকা আয়ের উৎসগুলির উপরও মনোযোগ দিতে হবে।

ইউটিউব শর্টস কত মিনিট হলে ভালো

ইউটিউব শর্টস ছোট আকারের এবং আকর্ষণক ভিডিওর জন্য তৈরি করা হয়, যেন দর্শকদের মনোযোগ দ্রুত আকর্ষণ করা যায়। সাধারণত ইউটিউব শর্টস এর আদর্শ দৈর্ঘ হওয়া উচিত ১৫ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে। কিন্তু ইউটিউব শর্টস এর সর্বোচ্চ দৈঘ ৩ মিনিট এর মধ্যে করা হয়েছে, যার প্রচলন ২০২৩ সালের অক্টবর মাস থেকে চালু হয়েছে । তবে, আগে এর দৈর্ঘ ছিল ৬০ সেকেন্ড মত। ইউটিউবের শর্টস শেল্ফে ১৫ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিটের মধ্যে যেকোন দৈর্ঘের শর্টস ভিডিও জমা দেওয়া যেতে পারে। 

ইউটিউব ভিডিও তৈরি করতে বিভিন্ন সমস্যা

ইউটিউব ভিডিও তৈরি করতে প্রায় সবাইকেই বিভিন্ন করম সমস্যায় পড়তে হয়। ভিডিও তৈরি জন্য ভালো মানের ক্যামেরা ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি না থাকলে ভিডিওর গুণগত মান কমে যায়, যার কারণে দর্শক ভিডিও পছন্দ করে না এবং ভিডিওর গুণগত মান ভালো না হওয়ায় দর্শকও কমতে থাকে। আবার অনেক সময় চ্যানেলের জন্য সঠিক বিষয়বস্তু, ভালো কন্টেন্ট আইডিয়া ও ভিডিওর গুণগত মান উন্নত করাও কঠিন হয়ে পড়ে।

অনেক সময় স্ক্রিপ্ট লেখ ও ভিডিও এডিটিং করার জন্য সময় মেলানোও আমাদের জন্য কঠিন সমস্যা হয়ে পড়ে। ভিডিও তৈরির সমস্যাগুলো দূর করতে হলে ধৈর্যশীল হতে হবে এবং শেখার মনোভাব বাড়াতে হবে ও নিয়মিত কন্টেন্ট পোস্ট করতে হবে। এই পোস্টে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করে কিভাবে তার বিস্তারিত তথ্য আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি সকল বিষয়বস্তু বুঝতে পেরেছেন। 

লেখকের শেষ কথাঃ

এই পোস্টে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করে কিভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানলাম শর্টসের আদর্শ দৈর্ঘ কত হওয়া উচিত। ইউটিউব থেকে অর্থ আয়ের সুবিধা ও ভিডিও তৈরির সময় কি ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন সে সমদ্ধে বিস্তারিত তথ্য। এই সকল তথ্য আপনার জানা থাকলে আপনি সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়ম অবলম্বন করে সফলতার সাথে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। এবং একজন দক্ষ ও সফল ইউটিউবার হতে পারবেন।

আশা করি আজকের পোস্টের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে টাকা আয় করে কিভাবে সে সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে যদি আপনার কোন প্রশ্ন অথবা গুরুত্বপূর্ণ মতাতম থেকে থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং সকল প্রকার তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

kbfj24.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url