রান্না করা নিমের ছালের রস পান করলে কি হয় জানুন
রান্না করা নিমের ছালের রস পান করলে দেহের কি পরিবর্তন ঘটে সেটা জানলে আপনি হয়তো এখনই এর রস তৈরির ক্রিয়া-কলাপ শুরু করে দিবেন। আপনি যদি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে রান্না করা নিমের ছালের রস পান করেন, তাহলে নিজ দৈহিক পরিবর্তন দেখে আপনি নিজেই অবাক হবেন।
রান্না করা নিমের ছালের রস পান করলে হজমশক্তি বাড়বে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। রান্না করা নিমের ছালে রয়েছে অধিকাংশই পুষ্টি গুনাগুন সম্পন্ন উপাদান। সপ্তাহে ৩ দিন এটি আপনার সকালের নাস্তাতে যুক্ত করতে পারেন। আপনার শরীরকে আরও বেশি মজবুত সুস্থ্য এবং সবল রাখতে সাহায্য করবে। রান্না করা নিমের ছালের রস খালি পেটে পান করলে কি হয় তার বিস্তারিত তথ্য জানতে হলে অবশ্যই আপনাকে সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়তে হবে।
পোস্ট সুচিপত্রঃ রান্না করা নিমের ছালের রস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য
- রান্নার করা নিম ছালের রস পান করলে কি হয়
- রান্না করা নিমের ছালের রস পান করার নিয়ম
- নিম পাতার রস খেলে কি হয়
- কোনটি ভালো নিমের গুড়া না নিম পাতার রস
- দ্রুত ওজন কমাতে নিমের পাতা খাবেন যেভাবে
- রান্না করা নিম পাতার পানি পান করার উপকারিতা
- নিমের ছালের গুঁড়ার ব্যবহার
- ভারতীয়রা চৈত্র মাসে কেন নিমের রস পান করে
- নিমের ছালের রস সংক্ষণের উপায়
- শেষ কথা
রান্নার করা নিম ছালের রস পান করলে কি হয়
রান্না করা নিমের ছালের রস পান করলে স্বাস্থ্যের বেশ কিছু উপকারিতা পাওযায় কিন্তু এর সঠিক পরিমাণে ব্যবহার সম্পর্কে জানা জরুরি। নিমের ছালের রসে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তকে পরিস্কার করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়, যার ফলে ত্বকের যেকোন ধরনের সংক্রমণ বা প্রদাহ যেমন- ইনফেকশান, ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত ও সজীব রাখতে সহয়তা করে।
নিম ছালের রস রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রন করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব উপকারী। রান্না করা নিমের ছালের রস পেটের খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর করে এবং গ্যাসট্রিক, এসিডিটি বদহজম ও কৃমি দূর কোরে হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে নিমের ছালের রস অধিক পরিমাণে ও দীর্ঘ সময় ধরে সেবন করলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। গর্ভবস্থা বা নবজাতক শিশুকে স্তন্যদানকালে নিমের ছালের রস সেবন করা ঠিক না এবং শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বব করতে হবে।
রান্না করা নিমের ছালের রস পান করার নিয়ম
রান্না করা নিমের ছালের রস পান করার সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত, যাতে সঠিক উপকারীতা পাওয়া যায় এবং কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হয়। নিম্নে কিছু নিয়ম উল্লেখ-
১) প্রস্তুত করণ প্রক্রিয়াঃ
- প্রথমে তাজা ও ভালো মানের নিমের ছাল সংগ্রহ করুন এবং বিশুদ্ধ পানিদ্বরা পরিস্কার করে ধুয়ে নিন।
- এরপর নিমের ছাল টুকরো করে কেটে নিন।
- একটি পাতিলে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে নিমের ছালের টুকরোগুলো দিন এবং ২০-২৫ মিনিট সেদ্ধ করুন।
- সেদ্ধ করা অবস্থায় পানি হালকা বাদামী রং ধারন করলে চুলা থেকে নমিয়ে একদম ঠাণ্ডা হতে দিন।
- একদম ঠাণ্ডা হলে ছাকুনি দ্বারা ছালগুলো ছেকে রস বের করে নিন।
- নিমের ছালের রস পান করার পূর্বে আপনি চাইলে এর সাথে মিষ্টি জাতীয় কিছু যোগ করতে পারেন। তবে মিষ্টি জাতীয় অন্য কিছুর থেকে মধু হলে ভালো।
আরও পড়ুনঃ
২) পান করার নিয়মঃ
- সাধারণত দিনে ১-২ বার নিমের ছালের রস পান করা যেতে পারে।
- ১-২ চা চামচ (১৫-২০ মিলি) নিমের ছালের রস পান করুন।
- খালি পেটে বা ভরা পেটে পান করতে পারেন, তবে খালি পেটে পান করলে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায়।
৩) কখন খাবেনঃ
- সকালে খালি পেটে পান করুন ভালো কাজ করবে।
- রাতের খাবার খাওয়ার পরে ঘুমানোর ঠিক ১-২ ঘণ্টা পরে পান করুন।
৪) নিয়মিত ব্যবহারঃ
- নিয়মিত ভাবে দীর্ঘদিন যাবত নিমের ছালের রস পান না করাই ভালো, তবে নিয়ম মেনে সপ্তাহে ৩-৪ দিন পান করতে পারেন । দীর্ঘদিন যাবত সেবনের ফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিনে পারে।
- নিয়মিত ৭-১৪ দিন সেবন করুন, তবে দীর্ঘদিন সেবনের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা ভালো।
সতর্কতাঃ
গর্ভবস্থা, নবজাতক শিশুকে স্তন্যদানকারী মা, এলার্জি জনিত সমস্যা, লিভারের সমস্যা বা রক্তের রোগ জনিত সমস্যা যাদের আছে তাদের নিমের ছালের রস পান করা উচিত না। শিশুদেরও নিম ছালের রস পান করার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। নিম ছালের রস সেবনে যদি কোন পার্শ্বপতিক্রিয়া দেখাদেয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
উপরোউল্লেখিত নিয়মগুলো মেনে চলতে পারলে রান্না করা নিমের ছালের রস থেকে আপনি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা পেতে পারেন।
নিমের পাতার রস খেলে কি উপকার হয়
নিমের পাতার রস পান করার বেশ কিছু স্বাস্থ্যগুণ ও উপকারিতা রয়েছে, যেমন- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, হজমশক্তি বাড়ে, রক্ত পরিস্কার করে এবং ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। নিমের পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাগুণ সমৃদ্ধ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা শরীরকে নানা সংক্রামন ও প্রদাহ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। নিমের পাতার রসের কিছু উপকারিতা নিম্নে উল্লেখ-
- নিমের পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুণাগুণ সমৃদ্ধ উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- নিমের পাতা হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং পেটের খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর করে, যেমন- অম্বল,গ্যাসট্রিক, এসিডিটি বদহজম, কোষ্টকাঠিন্য ও কৃমি নিরাময় করতে সাহায্য করে।
- রক্তকে পরিস্কার করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়, যার ফলে ত্বকের যেকোন ধরনের সংক্রমণ বা প্রদাহ যেমন- ইনফেকশান, ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত, সজীব ও উজ্বল রাখতে সহয়তা করে,রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে।
- নিমের পাতা রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।
- নিমের পাতার রস চুলের খুশকি, চুলপড়া এবং ত্বকের সংক্রমণ ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- নিমের পাতার রস শ্বাসতন্ত্রের জন্য বেশ উপকারী উপাদান, যা শ্বাসতন্ত্রের নানা ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
- নিমের পাতা নানান ধরনের ফাঙ্গাস ও ব্যাকটেরিয়া সহ অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ নির্মূল করতে সাহায্য করে।
কোনটি ভালো নিমের গুড়া না নিম পাতার রস
নিমের গুঁড়া এবং নিম পাতার রস উভয়ই স্বাস্থ্যকর ও উপকারী উপাদান। আপনি আপনার দৈহিক কোন সমস্যা জন্য এগুলো ব্যবহার করছেন তার উপর নির্ভর করে কোনটির কি উপকারিতা আছে। তবে, তাদের উভয়ের ব্যবহার প্রনালির কিছু পার্থক্য রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে নীচে সংক্ষিপ্তাকারে উল্লেখ করা হলো।
- নিমের গুঁড়া-
- নিমের গুঁড়ু প্রায় ১-২ বছর যাবত সংরক্ষণ করা যায়। এটি মুখের ব্যথা, গলাব্যথা ও দাঁতের সমস্যা নিরাময়ে উপকার কোরে সমাধান করতে সাহায্য করে।
- এটি অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিফঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরিয়াল গুণ সমৃদ্ধ, যা খেলে হজমশক্তি, রোগ প্রোতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এরং ত্বক ও চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে।
- হাঁটুন ব্যথা বা শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথা হলে নিমের গুঁড়া সেটি নিরাময় করতে সাহায্য করে।
- রক্তের অতিরিক্ত শর্করার মাত্রা কমিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহয়তা করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহয়ক।
- নিমের গুঁড়া আয়ুরবেদিক, উইনানি ও কবিরাজি ঔষধ তৈরি করতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
- নিম পাতার রস-
- নিম পাতার রস স্বাস্থ্যের জন্য একটি ভেষজ উপাদান, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পাড়াতে সহায়ক।
- এটি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া এবং অ্যান্টিভাইরাল গুণ সমৃদ্ধ, যা শারীরিক বিভিন্ন রোগব্যধি থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে সাহায্য করে।
- নিম পাতার রস শরীর থেকে টক্সিন বের করে রক্ত পরিস্কার করতে সাহায্য করে, যা ত্বকের ইনফেকশান, ব্রণ ও ফুসকুড়ি মত সমস্যা সমাধনে সাহায্য করতে পাবে।
- পাচনের সমস্যায় নিম পাতার রস খুব কার্যকরী, হজমশক্তি বাড়াতে ও পেটের গ্যাস্ট্রিক ও এসিডিটি কমাতে এবং অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে সহয়তা করে।
- রক্তের অতিরিক্ত শর্করার মাত্রা কমিয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহয়তা করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহয্য করে।
- নিমের পাতার রস আয়ুরবেদিক, উইনানি ও কবিরাজি ঔষধ তৈরি করতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ
উল্লেখ্য দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য হলো, নিমের গুঁড়া তৈরি করতে অধিক সময় লাগতে পারে ও যেকোন পরিস্থিতিতে প্রতিদিনর পান করা কঠিন হতে পারে। তবে, নিম পাতার রস এই সমস্যা সমাধানে দিতে পারে কারণ নিম পাতার রস খুব সহজেই তৈরি করা যায়।
দ্রুত ওজন কমাতে নিমের পাতা খাবেন যেভাবে
নিমের পাতা ওজন কমানের জন্য অত্যন্ত উপকারী উপদান। নিম পাতায় ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার সহ অনেক গুণাগুণ থাকে যা, ইমিউনিটি ও মেটাবলিজম বাড়িয়ে তোলে আর কোলেস্টেরল কমায়। তবে, ওজন কমাতে শুধু এটি একা সক্ষম না। তার জন্য জীবনধারায় পরিবর্তন আনতে হবে, প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, খাদ্যভাস পরিবর্তন করতে হবে এবং নিয়ম করে ঘুমাতে হবে। অতিরিক্ত বা অসময়ে ঘুমানো যাবে না, অলসতা না করে শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। নিমের পাতা শরীরকে ডিটক্স করে এবং টক্সিন দূর করে, যার ফলে দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিম্নে নিমের পাতা খাওয়ার কিছু পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো-
- নিম পাতার রসঃ কিছু পরিমাণ কঁচি ও তাজা নিমের পাতা সংগ্রহ করে বিশুদ্ধ পানিদ্বারা ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর পাটায় পিষে বা ব্লেন্ডারে পিষে এর রস বের করুন। সরাসরি রসটি পান করতে পারেন অথবা মিষ্টি জাতীয় কিছু মিশিয়ে পান করুন। তবে, মধু মিশিয়ে পান করলে ভালো উপকার পাবেন। নিমের পাতার রস প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করতে করুন ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
- নিম পাতার চাঃ নিম পাতার চা দ্রুত ওজন কমাতে খুব ভালো কাজ করে। কয়েকটি নিমের পাতা গরম পানিতে দিয়ে ১০-১৫ মিনিট ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এরপর ছাকনা দ্বারা ছেকে নিয়ে চা বানিয়ে পান করুন অথবা তিক্ততা কমাতে মধু মিশেয়ে পান করুন। এভাবে সকালে ও রাতে পান করতে পারেন।
- নিম পাতার গুঁড়াঃ নিম পাতা রোদ্রে ভালোভাবে শুকিয়ে তার গুঁড়া পাওডার তৈরি করুন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ১ চা চামচ নিম পাতার গুঁড়া পাওডার হালকা কুসুম পানি সাথে বা মধুর সাথে মিশেয়ে সেবন করুন। এটি অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করবে ও শরীর থেকে টক্সিন দূর করবে।
- নিম পাতা চিবিয়ে খাওয়াঃ নিম পাতার তিক্তস্বাদ যদি গ্রহণ করতে পারেন, তবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২-৩ টি তাজা পাতা বিশুদ্ধ পানিদ্বারা ভালোভাবে ধুয়ে তা মুখে দিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন অনেক উপকারিতা পাবেন। ইমিউনিটি বাড়িয়ে দিবে ও হজমশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
সতর্কতাঃ
গর্ভবস্থা, নবজাতক শিশুকে স্তন্যদানকারী মা, এলার্জি জনিত সমস্যা, লিভারের সমস্যা বা রক্তের রোগ জনিত সমস্যা যাদের আছে তাদের নিম পাতার রস বা গুঁড়া পাউডার ব্যবহার করা উচিত না। শিশুদেরও এটি পান করার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। নিম পাতার রস বা গুঁড়া ব্যবহারে যদি কোন পার্শ্বপতিক্রিয়া দেখাদেয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
রান্না করা নিম পাতার পানি পান করার উপকারিতা
নিম পাতা শুধু পানি দিয়ে রান্না করার পর সেই পানি পান করার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। নিম পাতায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিভাইরাল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি সহ অনেক গুনাগুন সম্পন্ন উপাদান রয়েছে। রান্না করা নিম পাতার পানি পান করার কিছু উপকারিতা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- নিম পাতার পানিতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট গুনাবলী, যা দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- নিম পাতার পানি রক্তে থাকা টক্সিন দূর করে এবং ত্বকের সংক্রমণ, যেমন- ইনফেকশন, ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি কমিয়ে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও ত্বককে উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে।
- নিম পাতার পানি চুলের যত্নেও বেশ উপকারি, চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি, চুলপড়া বন্ধ ও খুশকি দূর করতে সহায়তা করে।
- নিম পাতার পানি পেটের পাচন ক্রিয়া উন্নত করে, গ্যাস্ট্রিক, এসিডিটি, কৃমি দূর করে ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
- নিম পাতার পানি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারি। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে রেখে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- নিম পাতার পানি সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথায় বেশ উপকারি। শরীরের চর্বি ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- নিম পাতার পানি মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, মাড়ি শক্ত করে, দাঁতের ব্যথা ও মুখের ব্যথা দূর করে।
ব্যবহার প্রক্রিয়া করণঃ
- নিম পাতা বিশুদ্ধ পানি দ্বারা পরিস্কার করে ধুয়ে নিন।
- একটি পাতিলে নিম পাতা ও পরিমাণ মত পানি দিয়ে প্রায় ৫-১০ মিনিট সেদ্ধ করুন।
- এরপর ভালোভাবে ঠাণ্ডা করে ছাকুনিদ্বারা ছেকে খালি পেটে পান করুন সকালে অথবা রাতে, সপ্তাহে ২-৩ দিন। দীর্ঘদিন সেবনে পাশ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
সর্তকতাঃ
গর্ভবস্থা, নবজাতক শিশুকে স্তন্যদানকারী মা, এলার্জি জনিত সমস্যা, লিভারের সমস্যা যাদের আছে তাদের নিম পাতার পানি পান করা উচিত না। শিশুদেরও নিম পাতার পানি পান করার বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। নিম পাতার পানি সেবনে যদি কোন পার্শ্বপতিক্রিয়া দেখাদেয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
নিমের ছালের গুঁড়ার ব্যবহার
নিমের ছালের গুঁড়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। এটি বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায়। নিমের ছালের গুঁড়া অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিফঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরিয়াল গুণ সমৃদ্ধ,যা সুস্বাস্থ্য, ত্বক, চুল ও দাঁতের জন্য উপকারী। দাঁতের সমস্যা, ব্রণের সমস্যা, মাথায় খুশকি, উকুন, কৃমি, হজমের সমস্যা ও চর্মরোগের সমস্যা সমাধানে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই সর্ম্পকে কিছু উদাহরণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- স্বাস্থ্যের যত্নেঃ নিমের ছালের গুঁড়া শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী উপাদান, যা নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীর ও স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে। হাঁটুর ব্যথা, শরীর ব্যথা বা শরীরের যেকোন জয়েন্টের ব্যথা, অতিরিক্ত ওজন কমাতে, মুখের মাড়ি ও দাঁতের সমস্যা দূরিকরণ ইত্যাদি কাজে উপকার পাওয়া যায়।
- ত্বকের যত্নেঃ নিমের ছালের গুঁড়া ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা যেতে পারে। নিমের ছালের গুঁড়ার সাথে পরিমাণ কত পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং সংক্রমন স্থানে, যেমন- ত্বকের চর্মরোগ, ব্রণ, ফুসকুড়িতে প্রয়োগ করুন তারপর কিছুক্ষণ পরে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। নিয়ম অনুসারে ব্যবহার করলে এগুলো সমস্যা কমে যাবে।
- চুলের যত্নেঃ নিমের ছালের গুঁড়ার সাথে লেবু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এবার এটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট রেখে তারপর বিশুদ্ধ পানি দেয়ে ধুলে ফেলুন। এভাবে ব্যবহারের ফলে চুল পড়া বন্ধ হবে ও চুলের স্বাস্থ্য ভালো হবে এবং খুশকি দূর হবে।
আরও পড়ুনঃ
- দাঁতের যত্নেঃ নিমের ছালের গুঁড়ার সাথে সামান্য পরিমাণ লবন মিশিয়ে সেটি দাঁতে ব্যবহার করলে অনেক উপকার পাওয়া যেতে পারে। মাড়ি মজবুত করে ও দাঁতের ব্যথা ও দাঁতের পোকা দূর করে, অকালে দাঁত পড়া বন্ধ হওয়ার সম্ভবনা উন্নত করে।
- পেটের সমস্যা দূর করতেঃ নিমের ছালের গুঁড়া সেবনে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়, যেমন- বদহজম দূর হয়ে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, গ্যাস্ট্রিক, এসিটিডি, কৃমি দূর হয়। ১ চা চামচ নিমের ছালের গুঁড়া ও ১ চা চামচ মধু ১ গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খালি পেটে পান করলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
অন্যান্য ব্যবহারঃ জমিতে ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় দমনে নিমের ছালের গুঁড়া প্রাকৃতিক কীটনাশক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আবার প্রাকৃতিক জৈব সার হিসাবেও এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
সর্তকতাঃ
অন্তঃসত্ত্বা, স্তন্যদানকারী মা, এলার্জি জনিত সমস্যা, লিভারের সমস্যা যাদের আছে তাদের নিমের ছালের গুঁড়া না ব্যবহার করা উচিত। নিমের ছালের গুাঁড় সেবনে যদি কোন পার্শ্বপতিক্রিয়া দেখাদেয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ভারতীয়রা চৈত্র মাসে কেন নিমের রস পান করে
চৈত্র মাসে নিমের রস পান করার প্রচলত ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি প্রাচীনতম প্রথা, যা ভারতীয়রা যুগযুগ ধরে উৎসব মুখর ভাবে পালন করে আসছে। এ প্রথা বিশেষ করে ভারতের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পালন করতে দেখা যায়। তাড়া বিশ্বাস করেন এই মাসে নিম গাছে দেবী শীতলা ও দেবী দূর্গার অধিষ্ঠান হয়। তাই তাড়া মনে করেন এই মাসে নিমের রস পান করলে শীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও রোগমুক্ত জীবন লাভ করা যায়। এছাড়া অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট রয়েছে নিম পাতার রসে, যা শীরের জন্য উপকারী উপাদান। নিম্নে এর কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো-
ঋতু পরিবর্তনঃ ভারতীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী বাংলা সনের প্রথম মাস হলো চৈত্র মাস, যা ঋতু পরিবর্তনের সময়। এ সময় ঋতু পরিবর্তনের ফলে মানবদেহে বিভিন্ন রোগ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এ সময় নিমের রস পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
এই ঋতু পরিবর্তনের ফলে মানবদেহে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়, বিশেষ করে চর্মরোগ, জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও বিভান্ন রকম সংক্রমক রোগের প্রবণতা দেখা যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ নিমের রসে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। রক্তকে পরিস্কার করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়, যার ফলে ত্বকের যেকোন ধরনের সংক্রমণ বা প্রদাহ যেমন- ইনফেকশান, ব্রণ, ফুসকুড়ি ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে এবং শরীর ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত ও সজীব রাখতে সহয়তা করে।
ডিটক্সিফিকেশনঃ নিমের রস শরীরের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়, যার কারণে শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে ও সুস্থ্য রাখতে সহয়তা করে। রক্ত পরিষ্কার করে ও ত্বককে বিভিন্ন সংক্রমন থেকে সুরক্ষা করে।
ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যঃ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যুগযুগ ধরে চৈত্র মানে নিমের রস পান করার ঐতিহ্য ও প্রথা পালন করে আসছে। বিশেষ করে তাড়া মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যে, এ মাসে নিম গাছে দেবী শীতলা ও দেবী দূর্গার অধিষ্ঠান হয়। তাই তাড়া মনে করে এ মাসে নিমের রস পান করলে শীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও রোগমুক্ত জীবন লাভ করা যায়।
চৈত্র মাসে নিমের রস পান করার সংস্কৃতি বা প্রথা বিশেষ করে ভারতীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পালন করে। তবে এটি শুধু ভারতীয় সংস্কৃতি বা প্রথা নয়, এর পেছনে রয়েছে প্রাচীন সভ্যতা, ভেষজ ঔধধি গুনাগুন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায়।
নিমের ছালের রস সংরক্ষণের উপায়
নিমের ছালের রস অনেক গুনাগুন সম্পন্ন একটি ভেষজ, যা প্রাচীনকাল থেকেই প্রাকৃতিক ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। তাই এটি সংক্ষণ করা অতিব জরুরী। নিম্নে উল্লেখিত কিছু উপায় রয়েছে-
- শুকনো জায়গায় রাখুনঃ নিমের ছালের রস পরিষ্কার কাঁচের বোতলে ভোরে শুকনো জায়গায় রাখুন, কারণ কাঁচের বোতলে বাইরের বাতাস কম প্রবেশ করতে পারে ও উষ্ণতা বজায় থাকে তাই বহুদিন রস সংরক্ষণ করা যায়।
- ঠাণ্ডা রাখুনঃ নিমের ছালের রস সব সময় ঠাণ্ডাস্থানে রাখুন, এমনস্থানে রাখুন যেখানে রোদ্রের আলো পৌঁছায় না সে স্থানে রাখুন।
- ফ্রিজে সংরক্ষণঃ নিমের ছালের রস বাইরে সংরক্ষণ করাটা খুব একটা সহজ না, তাই কাঁচের বোতলে ভোরে ফ্রিজের নরমাল স্থানে রাখুন। এটি ঠাণ্ডা ও সংরক্ষণ করতে সাহায্য করবে।
- প্রেসারাইজড বোতলে সংরক্ষণঃ নিমের ছালের রস প্রেসারাইজড কাঁচের বোতল বা প্লাস্টিকের বোতলে সংরক্ষণ করা জেতে পারে। কারণ প্রেসারাইজড কাঁচের বোতল বা প্লাস্টিকের বোতলে বাইরের বাতাস প্রবেশ করতে পারে না তাই রস অনেক দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা জেতে পাবে।
- অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল বা প্লাস্টিকে সংরক্ষণঃ নিমের ছালের রস সংরক্ষণের জন্য অ্যালুমিনিয়াম বা প্লাস্টিক ব্যবহার করা জেতে পারে। এগুলি রসের আদ্রতা ও উষ্ণতা বজায় রাখতে সাহায্য করে রসকে সংরক্ষণ ও পরিষ্কারযোগ্য রাখতে সহায়তা করে।
উপরোল্লেখিত যেকোন একটি উপায় অবলম্বন করে নিমের ছালের রস দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারেন। নিমের ছালের রসে রয়েছে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল গুনাগুন সম্পন্ন উপাদান, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষর জন্য খুব উপযোগী।
নিমের ছালের রস পান সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য - শেষ কথাঃ
নিমের ছালের রস অত্যন্ত কার্যকরী ও উপকারী তরল পানীয় উপাদান, এটি পান করলে শরীরের অনেক উন্নতি ও পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। হজমশক্তি বাড়বে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। নিমের ছালের রসে রয়েছে অধিকাংশই পুষ্টি গুনাগুনা। তবে, নিয়ম মেনে পান করতে হবে। দীর্ঘ সময় ধরে এটি সেবন করা যাবে না। অতিরিক্ত বা দীর্ঘ সময় ধরে সেবন করলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই দীর্ঘ সময় সেবন করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আশা করি আজকের পোস্টের মাধ্যমে রান্না করা নিমের ছালের রস পান করলে কি হয় সে সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে যদি আপনার কোন প্রশ্ন অথবা গুরুত্বপূর্ণ মতাতম থেকে থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং সকল প্রকার তথ্য পেতে আমাদের সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
kbfj24.com এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url